বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন : নেওয়া হচ্ছে লন্ডনে
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সকালের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে চিকিৎসক দলের লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। কাতারের আমিরের দেওয়া (বিশেষায়িত উড়োজাহাজ) রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে অসুস্থ নেত্রীকে লন্ডন নেওয়া হবে। বেগম জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানের লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছার কথা আজ সকালে।
চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৪ জন সহযাত্রী হচ্ছেন। এর মধ্যে এসএসএফের দুজন সদস্যও রয়েছেন। বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের নিজস্ব চিকিৎসক ও নার্সের একটি দলও থাকছে। ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার জটিলতা এখনো কাটেনি। তবে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত ও সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে অ্যাডভান্স হেলথকেয়ার সেন্টারে নেওয়ার এখনই সময়। তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দলের পক্ষ থেকে আজ বাদ জুমা সারা দেশে মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন গতকাল দুপুরে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর গুলশানে এভারকেয়ার হাসপাতালে বৈঠকে বসে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড। এতে যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে ভার্চুয়ালি আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে বিকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ডা. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দেশমাতাকে উন্নত চিকিৎসার্থে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার আলোকে যদি সবকিছু ঠিক থাকে কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে অথবা আজ শুক্রবার সকালের ভিতরে ইনশাল্লাহ যুক্তরাজ্যে অর্থাৎ লন্ডনের নির্ধারিত হসপিটালে তাঁকে নিয়ে যাব। তাঁর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বেশ কয়েকজন দেশি চিকিৎসক এবং বিদেশের দুজন চিকিৎসক থাকবেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে যাতে যাত্রাপথে তাঁর কোনো ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে সুস্থভাবে উড়োজাহাজে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আমরা ইনশাআল্লাহ তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাব। দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য দেশবাসীসহ দেশের বাইরে হাজার-লাখো মানুষের কাছে দোয়া চাই। যারা এত দিন তাঁর সুস্থতায় দোয়া করেছেন, তাদের সবার কাছে আমরা কতৃজ্ঞ। আপনাদের এ দোয়া-ই ম্যাডামকে সুস্থ করে তুলবে। আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান এবং তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, দেশনেত্রীর ছোট ছেলের সহধর্মিণী সৈয়দা শামিলা রহমান, তাঁদের দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান, তাঁর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারসহ তাঁদের আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকেও সবার কাছে দোয়া চাই এবং দেশবাসীকে কৃতজ্ঞ জানাই। ’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা, সেনাবাহিনীসহ তিন বাহিনী প্রধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী, চীন, রাশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান হাইকমিশনের সব ধরনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন।
‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, ‘আমরা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করছি না। মেডিকেল বোর্ড গতকাল তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছে। ফিজিক্যালি দেখছেন যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তারগণ। আমরা আল্লাহর রহমতে আশাবাদী যে ইনশাল্লাহ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আল্লাহর অশেষ রহমতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, এবারও ইনশাল্লাহ উনি আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফেরত আসবেন। ’