পাবনা প্রতিনিধি
জয়নাল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক। প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটতেই ক্ষেত থেকে টাটকা সবজি তুলে নিয়ে আসেন বাজারে। তবে ভগীরথপুর গ্রাম থেকে মন্ডোল মোড় পর্যন্ত ৩ কি:মি: সড়কের বেহাল অবস্থা হওয়ায় কৃষি পণ্য নিয়ে আরৎ পর্যন্ত পৌঁছাতে পোহাতে হয় নানাম ভোগান্তি। শুধু জয়নাল ইসলাম নয় তার মতো এমন অসংখ্য কৃষক তার কষ্টের অর্জিত ফসল ক্ষেত থেকে আরৎয়ে আনতে পেতে হচ্ছে চড়ম বেগ। শুধু কৃষি বিপণন নয়, চড়ম ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসা সহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।
পাবনা সদর উপজেলা হেমায়েতপুর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের গ্রাম ভগীরথপুর। সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা এই গ্রামটির উর্বর মাটিতে শাক-সবজি সহ জন্মায় বিভিন্ন ধরণের ফসল। তবে তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়কের জন্য যুগের পর যুগ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ভগীরথপুর, ভবানীপুর, সানিকদিয়ার, চড়কুরুলিয়া, কাবলিপাড়া, নিয়ামতল্লাহপুর সহ ৬ গ্রামের অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ। সারাদেশে বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক পাকা হলেও বদলায়নি এ এলাকার চিত্র। বর্ষা মৌসুমে সড়কটি কাঁদামাটির হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ে আরও দ্বিগুণ।
স্থানীয়রা জানান, সাপে কাটা সহ মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নিতেও পোহাতে হয় চড়ম দূর্ভোগ। শুধু কৃষি বিপণন নয় সড়কটির কারণে শিক্ষা, চিকিৎসা সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নেও পিছিয় পরছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক যুগেও কাঁদা মাড়িয়ে চলাচল করছেন এলাকাবাসী। কাঁদা মাটির সড়ক হওয়ায় ঠিক মতো গাড়ি না পেয়ে মাথায় সবজি নিয়েই তড়িঘড়ি করে আরৎএর দিকে ছুটছেন কোন কোন কৃষক। সময়মত বাজারে পৌঁছাতে না পেরে পাচ্ছেন না ফসলের ন্যায্য দামও। বছরের পর বছর এভাবেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে চলছে তাদের জীবন।
কথা হয় ভগীরথপুর গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, শিশুদের লেখাপড়া, কৃষিকাজ, ফসল আনা-নেওয়া, গ্রাম থেকে শহরে যেতে নানাভাবে ভোগান্তিতে পরতে হয় তাদের। তিনি জানান, অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতেও কষ্টের যেন শেষ নেই তাদের। তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে আরও কয়েক গুণ ভোগান্তি বাড়ে বলে জানান তিনি।
নিয়ামতপুর এলাকার মোক্তার হোসেন’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পাবনা সদর হেমায়েতপুর ইউনিয়নের মন্ডলমোড় থেকে ভগীরথপুর পর্যন্ত কাঁচা সড়কটির দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার। অথচ কাঁচা সড়কের বেহাল দশার কারণে সন্তানদের বিয়ে দিতেও বিড়ম্বনায় পরতে হচ্ছে অভিভাবকদের। মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কের কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে এ এলাকার ছয় গ্রামের মানুষ। তাই সড়কটি দ্রুত পাকা করে ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানান এই ভুক্তভোগী।
কথা হয় ছেফাত উল্লাহ বিশ্বাস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেনের সঙ্গে তিনি জানান, এই এলকাটিতে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। অথচ এই এলাকাটিতে কোন পাঁকা সড়ক না হওয়ায় একদিকে যেমন কৃষি বিপণন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অপরদিকে এলাকাটিতে বাল্য বিবাহের প্রবাণতা বাড়ছে। তিনি জানান, এলাকা গুলোতে তেমন রাস্তা-ঘাট না থাকায় খুব একটা গাড়িঘোড়া চলে না। এলাকাটি নির্জন হওয়ায় মেয়েদের নিরাপত্তা জনিত কারণে অল্প বয়সেই বাল্য বিয়ে দিয়ে থাকেন অভিভাবকরা। এতে করে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার অসংখ্য শিক্ষার্থী। তাই দ্রুত সড়কটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
চরগরগরি এলাকার কৃষক হাসিম প্রামাণিক, চরপ্রতাপপুর কাবলিপাড়া এলাকার কৃষক শাহীন, একই এলাকার কৃষক সানাউল্লাহ, চর কুরুলিয়া এলাকার নিপুল শেখ’র সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এই এলাকা দিয়ে কয়েক হাজার বিঘা জমির, কাঁচা মরিচ, মুলা, ধুন্দল, করলা, পেঁপে, কলা, ঝিঙে, বরবটি, শসা, বেগুণ, লাউ, কুমড়া, পটল, পালং শাক, লাল শাক, পুঁই শাক, গ্রীষ্মকালীন শিম, কাকড়োল, কচু, ডাটা শাক, ঢেঁড়স সহ বিভিন্ন সবজি বাজারে নেওয়া হয়। অথচ সড়কটি পাকা না হওয়ায় বাজারে সবজি পৌঁছাতে দেরি হয় তাদের, ফলে বাজারে সবজি পৌঁছানোর আগেই ব্যাপারীরা অন্যান্য এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে ফেলে বলে জানান তারা। এতে করে অনেক সময় লোকসানেই সবজি বিক্রি করে থাকেন তারা। তারা জানান, এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায়, গাড়ি ও নৌকায় করে পণ্য নিতেও গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া। তাই দ্রুত সড়কটি নির্মাণের দাবি জানান ভুক্তভোগী এই কৃষকরা।
এবিষয়ে পাবনা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আফনান আজম রুদ্র বলেন, এলাকাটিতে তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে, সড়ক নির্মাণ করা হলে সহজেই কৃষকরা মাঠের সবজি বাজারে নিয়ে আসতে পারবে। ইতিমধ্যেই এই সড়কটির তালিকা আমরা পাঠিয়েছি, যদি অনুমোদন হয়, তাহলে সড়কটির দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এতে করে ওই এলাকার কৃষক উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।